পুরোনো বাড়ির গল্প মানেই তাতে শুকনো লঙ্কা আর কালো জিরের গন্ধ থাকে। আগেকার সব ছবি যেমন রাখা থাকত ঠাম্মার আলমারিতে। বোর্ড বাঁধাই করা।সাদা কালোর সাদাটুকু হলদে হয়্র গেছে। বাবা,বড় পিসি পিসিমণি সব লিলিপুটের মত ছোটো! কেমন সব হাসির ছবি। এ বাড়ির কোনও কিছুরই ,ঠাম্মার ভাষায়- "ধ্যাওচ্যাও নেই"।তাই এমন অমুল্য ছবিগুলো ফ্রেমের বাইরে রাখা। আলমারীতে।যে সব শাড়িগুলো খুব দামী,আর খুব আলগোছে রাখা থাকে,তার নিছে পাতা খবরের কাগজের পরত।তার ফাঁকে রাখা ছবি। ওপরে ট্যারাব্যাঁকা শুকনো লঙ্কা আর ইতঃস্ততঃ কালোজিরে। পোকার যম (যাদের জন্যে এত আয়োজন,সে পোকারা মাঝে মাঝে week end- এ ছেলে বৌ নিয়ে শুকনোলঙ্কার পাড়ে বসে ঐতিহাসিক শাড়িদের light and sound দেখে।মানে তাদের just কিছু এসে যায় না। ) ন্যাপথালিন আনা হত প্রচুর। মানে অন্যান্য অনেক কিছুর মত।এ বাড়িতে কোনো কিছুই অল্পে হয় না। সে যাই হোক,সে সব ন্যাপথালিন যাতে আমি গিলে না ফেলি,বা খাবার জলের জালায় না মিশিয়ে দি,বা নেহাত জানালা দিয়ে কাগজওলার চাঁদি লক্ষ্য করে না তাক করি,সেই জন্যে এমন লুকিয়ে রাখা হত,যে নিজেরাই আর খুঁজে বের করতে পারত না। তাই ঐ মহতী টোটকাই সম্বল। আমার সেই জন্যে ন্যাপথালিনে ভরসা নেই।কিছুতেই নেই। ওতেও নেই।
ঠাম্মার আলমারীর কথাই যদি উঠল তো,আমাদের আলমারীর কথা হোক। আলমারী মানেই ব্যক্তিগত পরিসর,বা নিদেন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা,এই তো জানি? কিন্তু আলমারীর মাথা ও আলমারীর পেছন এই দুটি যে কি চরম প্রয়োজনীয় তা কি জানতে পারতাম যদি না এই বাড়িতে থাকতাম?? আমাদের বাড়িতে,যাকে বলে আলমারী (কাঠের আলমারী ছাড়া যে সব আলমারী কে "আলমারী" গণ্য করা হয় এবাড়িতে,তা হলো 'গোদরেজ'।বাকি সব নাকি ফালতু) সেরকম আছে ৫টি। শুনে অবাক হবার কিছুই নেই।কারণ তাতে কিছুই নেই।জামাকাপড় ছাড়া। ঠাকুর ঘরের কাঠের আলমারীটা ছিল ছেলেদের।তাতে রাশি রাশি জামাকাপড়।প্যান্ট,পাঞ্জাবী,শার্ট।আর আল্মারীর চাবী দেওয়া যে লকারের মত দেরাজ তাতে অসংখ্য মোজা।ছোট,বড়,ছেঁড়া... এছাড়া, প্রচুর একপাটি মোজা। যাদের একপাটি নাকি চুরি গেছে। কোন হতভাগা গরীব অপদার্থ চোর,লোকের বাড়ি এসে আর কিচ্ছু না নিয়ে মোজা চুরি করে,এবং তাও আবার একপাটি-- এসব প্রশ্ন করলেই গলাধাক্কা ও পদাঘাত। যাই হোক। এই সব ছাড়াও যা থাকত ও থাকে,তা হল নিচের চওড়া তাকে বিছানার চাদর,বালিশের ওয়ার।আর কিছু টুকরো কাপড়।যেগুলো কেন ওখানে থাকে কেউই জানেনা।
তার নীচে ছিল ঠাম্মার দেরাজ।সারাবাড়িতে ঠাম্মার একমাত্র ব্যক্তিগত জায়গা,যেটা ছিল গুপ্তধনের খনি! চাবি লাগানোর ফুটোটা কবেই খারাপ হয়েছিল।আমি চিরকালই গোয়েন্দা। তাই ঠিক দেখে নিয়েছিলাম,ঠাম্মার আঁচলে চাবির গোছার অনেকগুলো চাবির মধ্যে একটা বড়ো, দাঁত-উঁচু চাবি আছে।সেইটা একটু কায়দা করে বসিয়ে এক টান মারলেই দেরাজ খুলে যায়। তার ভেতর কত কীই! আমাকে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হত না। আর হত না বলেই,আমার আরো ভয়ানক কৌতুহল হত!
আলমারীর গায়ে লম্বা আয়না বসানো।মানুষ-সমান। আলমারীর উল্টোদিকে মাটি অব্দি জানালা।তাতে ক্ষুদি ক্ষুদি খোপকাটা জাল বসানো। জালের বাইরে বাড়িতে ঢোকার সিঁড়ির বাঁক। তখন বিশাল পরিমাণে বাজার হত তো,ঝুড়ি করে ওই জানালার নিচের তাকে রাখা থাকত।দুপুর বেলায় তেরচা হয়ে রোদ পড়ত জানালা দিয়ে আয়নার গায়ে,আর আয়না থেকে লাফ দিয়ে আমাদের ফেটে মেটে চৌচির হয়ে যাওয়া লাল মেঝে তে। ঘাড় গোঁজ করে রোদ্দুর দেখতাম দুপুরে।কেমন রোদ্দুরের তৈরী রাস্তা।তাতে এককাঁড়ি ধুলো...কি সুন্দর! মেঝের ফাটাগুলোও কি ভাল্লাগতো! আর আমি এই সবের মধ্যেই বসে বসে ভাবতাম কবে ঠাম্মার চাবিটা হাতিয়ে ঐ দেরাজটা খোলা যায়!
ঠাম্মার আলমারীর কথাই যদি উঠল তো,আমাদের আলমারীর কথা হোক। আলমারী মানেই ব্যক্তিগত পরিসর,বা নিদেন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা,এই তো জানি? কিন্তু আলমারীর মাথা ও আলমারীর পেছন এই দুটি যে কি চরম প্রয়োজনীয় তা কি জানতে পারতাম যদি না এই বাড়িতে থাকতাম?? আমাদের বাড়িতে,যাকে বলে আলমারী (কাঠের আলমারী ছাড়া যে সব আলমারী কে "আলমারী" গণ্য করা হয় এবাড়িতে,তা হলো 'গোদরেজ'।বাকি সব নাকি ফালতু) সেরকম আছে ৫টি। শুনে অবাক হবার কিছুই নেই।কারণ তাতে কিছুই নেই।জামাকাপড় ছাড়া। ঠাকুর ঘরের কাঠের আলমারীটা ছিল ছেলেদের।তাতে রাশি রাশি জামাকাপড়।প্যান্ট,পাঞ্জাবী,শার্ট।আর আল্মারীর চাবী দেওয়া যে লকারের মত দেরাজ তাতে অসংখ্য মোজা।ছোট,বড়,ছেঁড়া... এছাড়া, প্রচুর একপাটি মোজা। যাদের একপাটি নাকি চুরি গেছে। কোন হতভাগা গরীব অপদার্থ চোর,লোকের বাড়ি এসে আর কিচ্ছু না নিয়ে মোজা চুরি করে,এবং তাও আবার একপাটি-- এসব প্রশ্ন করলেই গলাধাক্কা ও পদাঘাত। যাই হোক। এই সব ছাড়াও যা থাকত ও থাকে,তা হল নিচের চওড়া তাকে বিছানার চাদর,বালিশের ওয়ার।আর কিছু টুকরো কাপড়।যেগুলো কেন ওখানে থাকে কেউই জানেনা।
তার নীচে ছিল ঠাম্মার দেরাজ।সারাবাড়িতে ঠাম্মার একমাত্র ব্যক্তিগত জায়গা,যেটা ছিল গুপ্তধনের খনি! চাবি লাগানোর ফুটোটা কবেই খারাপ হয়েছিল।আমি চিরকালই গোয়েন্দা। তাই ঠিক দেখে নিয়েছিলাম,ঠাম্মার আঁচলে চাবির গোছার অনেকগুলো চাবির মধ্যে একটা বড়ো, দাঁত-উঁচু চাবি আছে।সেইটা একটু কায়দা করে বসিয়ে এক টান মারলেই দেরাজ খুলে যায়। তার ভেতর কত কীই! আমাকে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হত না। আর হত না বলেই,আমার আরো ভয়ানক কৌতুহল হত!
আলমারীর গায়ে লম্বা আয়না বসানো।মানুষ-সমান। আলমারীর উল্টোদিকে মাটি অব্দি জানালা।তাতে ক্ষুদি ক্ষুদি খোপকাটা জাল বসানো। জালের বাইরে বাড়িতে ঢোকার সিঁড়ির বাঁক। তখন বিশাল পরিমাণে বাজার হত তো,ঝুড়ি করে ওই জানালার নিচের তাকে রাখা থাকত।দুপুর বেলায় তেরচা হয়ে রোদ পড়ত জানালা দিয়ে আয়নার গায়ে,আর আয়না থেকে লাফ দিয়ে আমাদের ফেটে মেটে চৌচির হয়ে যাওয়া লাল মেঝে তে। ঘাড় গোঁজ করে রোদ্দুর দেখতাম দুপুরে।কেমন রোদ্দুরের তৈরী রাস্তা।তাতে এককাঁড়ি ধুলো...কি সুন্দর! মেঝের ফাটাগুলোও কি ভাল্লাগতো! আর আমি এই সবের মধ্যেই বসে বসে ভাবতাম কবে ঠাম্মার চাবিটা হাতিয়ে ঐ দেরাজটা খোলা যায়!
Comments