একথা সবাই জানে,  আমি বাড়ির গল্প করতে বসলে আমার আর কথা শেষই হতে চায় না। আসলে এত গল্প,এত স্মৃতি।  বন্ধু বান্ধব  চিরকালই নেই এর মতন। বাড়িতেই আনন্দের ভান্ডার তো ! বাইরের লোকের জন্যে সময় কোথায়? যৌথ পরিবারে জন্মেছি। খাস উত্তর কোলকাতার জমজমাট পাড়ায় আমাদের বাড়ি। বাগবাজার জায়গাটাই চিরকেলে হৈচৈ এর জায়গা।তার মধ্যে রাজবল্লভ পাড়া,মানে আমাদের পাড়াটা, আরো বেশী হুজুগে। জন্মে অব্দি দেখে আসছি রোজই কিছু না কিছু হয়ে চলেছে। এহেন পাড়ার একটি অন্যতম হুজুগে বাড়িতে আমার জন্ম। পাড়ায় এক ডাকে সব্বাই চেনে বাড়ির সব্বাই কে। না না,ভুল ভাবার কিছুই নেই।বিরাট  কিছু নয়। এমনিই। মানে সবেতেই এই বাড়ির লোকেদের কিছু না কিছু ভুমিকা থাকে( মূলতঃ experts comments..) । আমিও ছাই এইসবের মধ্যে বড়ো হলাম। 
         আমি যে বাড়িতে জন্মেছি,সেই বাড়ির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪। আমার ঠাকুরদা(দাদান),ঠাম্মা,ভালোঠাম্মা (বাবার কাকিমা),ছোড়দিদা (বাবার ছোটপিসি),ছোড়দাদু( বাবার ছোটকাকা),আমার বাবা,মা,আমার দুই কাকা, সবচেয়ে ছোট পিসি আমার বুয়া, আর বাকি সব কাজের লোকেরা।যারা কাজের লোক,এটা বুঝেছি অনেক বড়ো হয়ে। মা যেমন বলে, মা নাকি বিয়ে হয়ে এসে দুই শ্বাশুড়ির থেকে কোনো রকমের বকাই খায়নি,যেমন খেয়েছে কাজের লোকেদের থেকে। মা বলত "ওরাও আমার শ্বাশুড়িই ছিল। " তা এমন এক বাড়িত,বংশের বড়ো ছেলের,প্রথম সন্তান হলো। সব্বাই কি করবে ভেবে না পেয়ে তাকে মাথায় তুলে নেচে গেয়ে অস্থির! ফলে যা হল,তা হল আমি একটি আদর্শ বাঁদরী হলাম। সে মাশুল বাবা মা বুঝি এখনো দিয়ে চলেছে।

আমার আগে আমাদের বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য ছিল আমার বুয়া,মানে আমার বাবার সবচেয়ে ছোট বোন। সে আমার চেয়ে ১৭ বছরের বড়ো আর আমার বাবা কাকা পিসিদের সন্তানসম। তাই আমার সামনে আমার সমবয়সী বলতে কেউই নেই। আমার বাবা, মা,কাকারা আর বুয়া এরাই আমার সবচেয়ে কাছাকাছি বয়েসের ছিল সে অর্থে। কারণ ঠাম্মা,ভালো,ছোদ্দিদা,ছোদ্দাদু, এরা তো এত্তো বড়ো! আমার মা বিয়ের আগে থেকেই চাকরী করে। আমি জন্মানোর পড়েও মা চাকরী করত। ফলে অনেকটা সময় বাড়ির বাইরে।আমার সবকিছুর দায়িত্ব ছিল আমার ঠাম্মাদের।আর কাকাদের বুকের হাড় ছিলাম আমি(এখনও আছি । :) )। সারাদিন মা যে নেই জানতেও পারতাম না। সকাল হত হাসি মুখে।কোনও না কোনও গানের সুরে। আমার বড়ো (কাকু) আমাদের ফিলিপ্সের টু-ইন-ওয়ানটায় সকাল থেকে উঠেই গান চালিয়ে দিত। তখন তো টেপ রেকর্ডার। ক্যাসেট। ক্যাসেটের আবার দুটো পিঠ। 'A' আর 'B' । একপিঠের গান শেষ হলে বোতাম টিপে ডালা খুলে ক্যাসেট উলটে দিতে হত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাই আমার প্রথম বাক্য হল - "মামমাম,ক্যাসেটটা উন্টে দাও!" মেয়ের এহেন বাক্য স্ফূরণে বাড়িতে আনন্দের রোল।অতঃপর ঢাক-ঢোল বাদন পূর্বক মেয়ে কোলে নিয়ে রাস্তায় ঘুরিয়ে আনা। এই আরেক সমস্যা ছিল নাকি আমাকে নিয়ে।মায়ের কাছে শুনেছি। ছোটবেলা থেকেই "বাহির করেছে পাগল মোরে"।তাই কাজের লোকেদের এবং আমাদের বাড়িতে যে ভারী জল দিত,শিবু কাকু,সব্বার কাজ ছিল আমাকে নিয়ে আমাদের গলির মুখে কলের মোড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখিয়ে আনা। এটা না করলে নাকি আমি মোটামুটি ইরিমিরিকিড়ি বাঁধনটা দেখিয়ে দিতাম। এমনিতেই আমি ছোটবেলা থেকেই খুব চিৎকার করি।তখন গলাটা খোলতাই হত।সবাই তাই খুব ব্যজার মুখে আমায় ট্যাঁকে করে নিয়ে যেত।আমি কুকুর,ছাগল ইত্যাদি দেখে খুবই খুশি হতাম।
আজ এই সব লিখতে গিয়ে কি সব মনে পড়ছে।তাই সব লিখে রাখছি। আমার এই জানুয়ারী মাসে ২৫ বছর পূর্ণ হবে।জন্ম থেকে এখনও অব্দি আমার সেরা সঞ্চয়,বহু মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।আর এই ভালোবাসা পাবার একমাত্র কারণ,আমি আমার পরিবারে জন্মেছি। এই একটি মাত্র সুকৃতি আমাকে যে কত মানুষের ভালোবাসায় বহ্রিয়েছে তা আমার লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে বহু মানুষ থাকলে পরে,স্মৃতির সংখ্যাও অগুনতি হয়ত,তাই সে স্মৃতি মাঝে মাঝে আবছাও হয়,নতুন স্মৃতির জায়গা করে দেবার জন্যে।পাছে ভুলে যাই,তাই এই বেলা সব লিখে রাখি। তাই আজ এই লেখা শুরু করলাম।এবার অল্প অল্প করে লিখে রাখব। আমার বড়ো সাধের বাড়ির কথা।আমার গয়নার বাক্সের মত ছোটবেলার কথা। 
         

Comments

দস্যি মেয়ে যে।
Dipto said…
স্মৃতিটুকু থাক... অন্তত...
অপেক্ষায় থাকলাম পরের লেখার...
Deepanjan said…
Gaynar bakser moto chotobela ..ki kore lekho eto bhalo ..megh r moto ..topology
Experts comments : hmmmmmm.
Unknown said…
This comment has been removed by the author.
Unknown said…
ki kore lekho boloto erakhom...!!
khub sundor r misti lekha.... :)
Kanishka said…
লিখে যাও গপ্প-বুড়ি ... জমিয়ে গপ্প তো করতেই পারো তুমি ... লেখ।

Popular Posts