ফিরতে চাই বলেই না এত ডাকাডাকি

সুরঙ্গ ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে উঠছে। ছটফট করছি। আমি আমরা... নয় নয় করে সবাই। কোন কুলেঅথৈ জোয়ার। নদীর পারেই ভাঁটা। তীর্থ ফেরত কাকের মুখে আমিষ আমিষ গন্ধ। সন্ন্যাস ভেঙেছে। গৃহে ফিরিয়া দুইটি অন্ন, মৎস্য ও সোহাগী ঠুন্! চুড়ি-বালা ধাতু। হাতা খুন্তি ধাতু। হৃদয় কাষ্ঠল। ভরাভর্তি ছাই বাড়া আছে, বুক ভরে টাবুটুবু।
যদিও সবই তেলতেলে আঁধার। বুক অব্দি কালো। ভয় ভয়ের অমাবস্যা। যখন গ্রহতারা আলো হারা। চাঁদ নেই। তেলতেলে অন্ধকার। সুরঙ্গ ক্রমে অন্ধকার হয়ে আসছে।
এমন হলে মনুষ্য জিহ্বা ক্রমশ ভারী হয়ে আসে। সহজতম উচ্চারনীয় আর্তি খোঁজে মন, মনেরই এক বিশাল চলন্তিকায়। অতিকায় অন্ধকারে বিদ্যুতের মত ডুকরে ওঠে জিভ। জ্বরা গ্রস্ত শেলেষ্যা ধরা জিভ- মা! এই মা আমার মুখের অন্ন। নদীর জল। শত আঁধারের আলো। তারা  ভিন্ন আলো নেই। এমন অমাবস্যা। সে আলো চোখের তারায় এসেও আসেনা। গাঙের পথ চেনা বলে হোঁচট খাইনা কী ভাগ্যি!
আতস কাঁচের নীচে ঘুমিয়ে থেকে পিঠ পুড়ে গেছে সুধীজন। অন্ধকারকে মলম ভেবে আঁকড়ে ধরা তাই। এখন গুহামুখ ছোট হয়ে আসছে। সামগ্রিক তরলে ভাসছি। অভিযোজনে ক্ষুন্নিবৃত্তি, তবু নাড়ি পথে পেঁচিয়ে জড়িয়ে যাই যাই। মা রাখবেন না আর। জননী আমার, দ্বিধাহীন ঠেলায় বাতাসে ঠেলছেন আমায়। ক্রমে তমসায় চুল ভিজে যাচ্ছে। গড়িয়ে আসছে কালান্তকের রঙ। ঘোর কালো। ভয় পাচ্ছি মা। আর সকল প্রাণী যেমতি পাগলপারা। ভয় পাচ্ছি মা, ও মা! আমার চোখের শক্তি শেষ তাই এই আঁধারে বুকের ভিতর ইন্দ্রিয় দাহ্য। মশাল জ্বালো মা গো। সবচেয়ে বেশী যবে কালো হয়ে আসে তারপরেই নাকি উষা। চিনির রসের মতন রঙের সকাল। সে আসেনিদিনের নোটিশ টাঙাতে। শুধু আসছে ধ্বনিতে এ আকাশ রমমা! ইহ গচ্ছ, ওমা মা, মা গো একবার ইহ তিষ্ঠঃ।
সে এক অনেক দূরের কালে, জীবন কোম্পানীর পালায় নামতে এসেও বেঁকে বসেছিল নটি। একেবারে উল্টোপথে রওনা। সে সব পুরোনো দিনের কথা। পর্দা উঠত আড়া আড়ি।নটির সাধ ছিল পর্দা সরিবে দুই পার্শ্বে। সমবেত  দর্শকবৃন্দ আকুল হয়ে ছুটে আসবে।আজও পর্দা জোড়ার দাগ বয়ে বেড়ায় শ্লোকমাতৃকা। বাক্ দিলে মা, বর্ণ দিলে, বর্ম দিতে ভুললে? মহাভয় থেকে মহামারী থেকে মহাক্লেশ থেকে বাঁচাও বাঁচাও নাদ। খুব মজা বলো? যেন সমস্ত রান্না সারা, নুন টুকু বাকি... কেন? আজও ভরসা নেই? ভাবো মাপ জানিনা?
হে অনাদি, অর্গল ভাঙো। ধরমড় করে জাগুক সুপ্তোত্থিত মনসা। এক ঢেউয়ে নিয়ে যাক সেই গুহামুখে যেখানে কণায় কণায় ঝরে পড়ছে আলো।
মহা আলো। হর রোগ মা, মা গো হর পাপ। তুমি ছাড়া আমার ডাক নেই। তুমি ভিন্ন আমার দৈবী নেই এ জগতে। দিক হীন, মেধা হীন, ধর্মহীন যজ্ঞ ভূমিতে এসো মা ন্যাংটো পুঁটো। দেখো ধুলোয় গড়াগড়ি। অন্ধ তবু ঠাহর করে এগিয়ে যাচ্ছি তোমার দিকেই। এ গমনের গন্তব্য হও মা গো। হে ধরিত্রী, হে অপারসম্ভবা, হে অনন্ত আলোর জননী, আমাদের এই শেষ অভিযানে আঁচল বাজাও মা। তোমার আঁচলে সমস্ত চাবি। ঘোর কালিতে অন্ধ আমায় আকাশ দাও। ভূমি দাও সমপরিমাণ। আলোকযোজন করো। অঝোর আলো দাও দেবী, মা পৃথিবী শ্রীমতি বসুন্ধরা। 

Comments

Popular Posts