অমলতাসের আষাঢ়ে গপ্পো

আজ সকালে ঘুম ভেঙেছে দুজনের ডাকে।বাবান,আর মানি।বৃষ্টি এলে প্রিয়জনেরা অমন ভাবেই চিরকাল ডাকে।তারা জানে,তাই ডাকে। সেই থেকে তাই ঠায় জেগে। বাব্বা! আজকের কথা? কবে এ এ থেকে চেয়েছি,এক কণা বৃষ্টি বৈ তো কিছু না! আমার যে কি এই এক অস্থিরপনা! বৃষ্টির জন্যে মরি,শরতের জন্যে অভিমান করি...ধুর ধুর...যা হোক,আজ লিখতামই,অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্ত মেজাজ বাবু বলে এক ভদ্রলোক বাংলাদেশের জমিদারী ছেড়ে এসেছিলেন বছর ৯৮ মতন আগে,তাও আমার দাদানের দাদান ধরণের কারোর কাঁধে চেপে...সে ভদ্রলোক এবাড়ির মায়া কাটাতে পারেননি। আমি আবার বংশের বড়ো কিনা! একেবারে ঘাড়ে চেপে বসেছেন,ভাল্লোবেসে!
অনিয়মের বৃষ্টি হলে বাড়িতে সবচাইতে আনন্দের দৃশ্য হলো ছেলেরা মুখ ব্যাজার করে যে যার বাহারি গামছা পরে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে আর উঁকি দিয়ে আকাশ দেখছে,যেন ওপর থেকে কেউ বলবে "ঠিগাছে দাদা।অল কিলিয়ার!" " তারপরেই,খানকতক বিমর্ষ ফোন। এবং গামছা পরে কিছু হাঁটাহাঁটি। মাঝে ২১৬ কাপ চা। এক চুমুক,হাফ কাপ,স্লাইট, দাওনা গো,হবে নাকি! মরে যাব,এক কাপ দে ইত্যাদি মাপের চা।বিড়ির ধোঁইয়ায় বেশ একটা মনোরম ব্যপার হবার সময়েই ঘোষনা হয় "আজ তাহলে খিচুড়িই করো গো...আর বাবু,বুড়ো বাবা-কাকা বাড়িতে থাকলে একটু সুমন চালাতে হয় জানিস না?" এই যে! এই কয়েকটা জায়গায়,মানে কি বলব নিজেরই মুখে,এমন গর্ব হয় না! মানে বলতেই তো পারত কুমার শানু? কুমার শানু কি খারাপ? একটুও না!!! কিন্তু সুমন বলেছে! আমার ছোটো কাকু বলেই তো বলেছে,না? ব্যপারটা অমন! এর পরেই বাড়িতে নানারকম বাসন ঘষটানির আওয়াজ পাওয়া যায়। হবে না? ঠাম্মার খাটের তলা থেকে চালের হাঁড়ি আর দালের কৌটো বের করতে অমন আওয়াজ একটু হয়। পুরোনো সংসার,ভারী জ্বালা! তবু কি ভাগ্যি ছেলেরা বাড়ি আছে। এই আরেক জ্বালা...মা বলে "ঘর জ্বালানি পর ভোলানি"।মোটেও নয়! আমাদের বাড়ির লক্ষীশ্রী আমাদের ব্যাটাছেলেরা! আজ্ঞে! আমাদের আদরের "ব্যাটাছেলে'-গুলি বাড়ি থাকলে তবেই না বাড়িটা বাড়িটা মনে হয়। এইটা অন্যবাড়িতেও হয়? কি জানি?আমাদের বাড়িতে হয়।এমন কি মধ্যমগ্রামের বাড়িতে বসে বড়ো যখন রাতে খাবার সময় ফোন করে আমায় বলে "মা গো,আমিও খেতে বসেছি" -কি জানি কেন কিসে আস্বস্ত হই...তা আজও ছেলেরা বাড়িতে।সবকটা ছেলে নয় যদিও। :)  হুড়োহুড়িতে সুমনের গানের আড়ালে দিনের ভাগটা কেমন কেটে গেলো তাই টের পেলাম এক্ষুণি,যেই দেখলাম আমার দিনের ভাগটা নিয়ে তেমন কিছুই আর মনে পড়ছেনা...এর মাঝে হয়েছে কি,কফিটা গেছে শেষ হয়ে। আমার কি একটা জ্বালা?বলেছিলাম না...

                                            :গোপাল whos with you?
                                             :Ah! Forgot the intro! Meet my friend কপাল. We are kind of                                                                    living together.You know?

এই সব পড়ে পাওয়া দিনগুলো জুটে যায়। আরো জুটে যায় বিকেল থেকে সন্ধ্যে অব্দি প্রিয় বান্ধবীর সাথে শহরের এমাথা থেকে ওমাথা চরকি দেওয়া। এই আপাত সাধারণ রোজনামচা বলার কথা নয়,শোনারও কি? কি জানি? কিন্তু এই যে আজ ঘোর বসন্তে, আমার ভাঙা বাড়ির টিনের চালে বর্ষারাণী ঝমঝমিয়ে হেঁটে গেলেন...আলাদা তো হল? যে পা দুটো রোজ রোজ দৌড়ে ছাদের মেঝের তাপ বাঁচিয়ে কাপড় তোলে,আজ তার ছুটি। ভিজুকগে শুকনো কাপড়! যে দুপুর একটায় শেষমেশ বসতে পায় সকাল পুড়িয়ে,সে এক কাপ চা খাক!তারও আজ ছুটি।চায়ে আদা আর এলাচ।স্পেশাল না??! এই যাপনগুলোর, এই বাড়ির সাথে,পাড়ার সাথে আর এই বাড়িটার মানুষগুলোর জীবনবোধের সাথে যে কি ভীষন ম্যাচিং সে আমার সাধ্য নেই বোঝাবার। সব মিলিয়ে যেন মনের মতন শাড়িটা! যেমন এখন খুঁজছি। কাঁচা হলুদ রঙ্গের শাড়ি, তাতে পোড়া লাল রঙ্গের পাড়। সেই পাড়ে সোনালী জড়ির টেম্পল ডিজাইন।দাঁত দাঁঁত। ঐ আমার,আমাদের জীবন যাপন। গায়ে ঢালা কাঁচা হলুদ। মধ্যবিত্তের এলা রঙ। পাড়ে বনেদিয়ানার পোড়া দাগ। আর ঐ যে জরির ঝিকিরিমিকিরি,প্রাত্যহিকীর হী্রে,মানিক,পলাশ ফুল! ঝিকুর মাছের সাথে রোজই প্রায় ভুল করে যে শামুক চলে আসে,তাদের দাম নেই কে বলেছে? ওদের আমি শুকোতে দিই।ছাদের ঘোরানো সিঁড়িতে। ওরা রোদ্দুরে বসে।তারপর সেই এইটুকুন শামুকের খোলে করে কত কথা ভেবে,কত্তো কথা ভেবে দিনতো কেটে যায় রে বাবা! তাছাড়া গঙ্গা বিলাস এর বিষয়টা না হয় নাই ধরলাম...এই যে মিলিজুলি সরকার...এই যে সব জেনে শুনেি নাজুক নাদানী...আমার অমন রোজের চলে,সবার চলে কি? এখনও? সে জানলেও আমার বলে রাখা দরকার।আমার শালিখ জীবনের কিছু তো থাকবে!
কোলকাতার ওপর আমার ছোটবেলা থেকে রাগ,বৃষ্টি পড়লে আরো সুন্দর লাগে বলে গা জ্বলে যায়...বৃষ্টির কোলকাতা মানে তো সাদা শার্ট আর নীল জিনস...মরণ হয় না আমার! দূর হ!এই শহরে এখনও বৃষ্টি হলে উত্তর কোলকাতার পুরোনো বড়োরাস্তার দুপাশে রাশি রাশি কদমের পাতা জমে থাকে...আমের মুকুল আর সজনে ফুলের মাতলামি...কৃষ্ণচূড়ায়  পুড়ে গেছে সব? কি জানি...।এই শহরে এখনও বসন্ত কালে দেওয়ালে ঠেসে ধরে বৃষ্টি হয়,তেড়ে!
এই শহরেই মেগালোম্যানিয়াক ব্লগার বাংলা টাইপ করতে করতে জানালার হাওয়া আর সরোদের ঝালায় থতমত খেয়ে অকারণ চশমা ঠিক করেছে। বানান ভেবড়ে ইয়ে...আজ সব কিছুতেই জলরঙের মতন নরম ওম...জল তবু কেমন নিবিড়! সারাদিন বাদে বাড়ি ফিরলে জড়িয়ে ধরার মতন।"Bheeg jaye sajna mera,laut` ke ghar aye" বৃষ্টি পড়ছে মানে যদি এই হয় যে নাক টানছি,চোখ মুখছি আর শিলে আদা বাটছি,মা মুখ ব্যাঁকাচ্ছে"নিজের বেলায় আঁটিসুঁটি! হুঁ! ঘর জ্বালানি,পর ভোলানি! " এই সব বলে,আর ঘরে দূরে কোথাও এক কোণে সুমন বাজছে,অযাচিত ভাবে, "খোদার কসম জান...!" , জানালা দিয়ে পানসুপুরি হাওয়া আসছে যাচ্ছে।জাস্ট কিচ্ছু মানছেই না! আর সব বলা হয়ে গিয়েও যে কথাটা একেবারে বলা হলনা,তা কোলে নিয়ে থুম মেরে বসে থাকা হয়, তবে হ্যাঁ, বৃষ্টিই হচ্ছে বটে,ভারি বৃষ্টি হচ্ছে খুব যা হোক!


Comments

Bhaktacharyya said…
:) :D :V .. forashi te jake bole " la jabab"!!

Popular Posts